Thursday, August 9, 2018

বিষণ্ণ শহর




আমার শহর ঢেকে যাচ্ছে গাঢ় কুয়াশায়
জমাট ক্ষোভের মত বিষণ্ণ কুয়াশায়
ঢেকে যাচ্ছে আমার শহর
যে কোন সময় বিস্ফোরণ হতে পারে
ভয়াল বিস্ফোরণ—অন্তর্নিহিত কথার।
উৎসব শেষে যারা ফিরেছে ঘরে
তারা কেউ আনন্দিত নয়।
কেউ শোকগ্রস্ত নয়, যারা
এইমাত্র ফিরে এল টাটকা কবরে
তাজা ফুল ছড়িয়ে ।
শোক ও সুখ সমার্থক আজ।
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়াহীন স্থবির সময়
ঢেকে যাচ্ছে ধুসর কুয়াশায়
গাছের পাতা অস্বীকার করেছে বাতাসের গতি
নদীজল স্থির চিত্রের মত শুয়ে আছে
চলাচল ভুলে।
আগ্নেয় লাভায় রুদ্ধ সভ্যতার পটভূমে
জন্মায় না ইতিহাস।
প্রাগৈতিহাসিক  প্রাণীর  ধুম্রনিঃশ্বাসে
ক্রমশ; অস্পষ্ট জীবনের অবয়ব।
তবু হে অলৌকিক করপুট
তুলে নাও জীবনের বীজ ও সংগ্রাম
শুরু হোক, প্রেম ও  প্রাপ্তির
আশ্চর্য অধ্যায়।

মধ্যবিত্ত


ছিটেবেড়ার দেওয়াল পেরিয়ে
সন্ধ্যা ঢুকে যায় যখন তখন
চৌখুপি ঘরে
চৌকিতে জড়সড় শৈশব
রুটি সেঁকা দেখতে দেখতে
শিখে নেয় বর্ণ পরিচয়।
নামতার সুরে মেশে শঙ্খের আকুতি
অতীত আলাপে বিম খেয়ে কেঁপে ঠে 
বৃদ্ধার পানসুপারি ঠোঁট । 

সকাল হলেই
খোলা চাতালে  ওড়ে খুশমেজাজ রোদ  
লাউমাচায় দোল খায় পড়শি পাখি
ষ্টিকুটুম  গান গেয়ে মিতালি পাতায়
গৃহস্থের খোকার সাথে

নবান্নের দিনে
নতমুখী চোখে ভাসে ব্রতকথার  সুর   
দুধে ভাতে রেখো মাগো  আমার সন্তানে   

নটী


সব অন্ধকার মুছে দিয়ে
তুমি চলে যাচ্ছ অন্য গোলকে
তোমার লুটিয়ে  পড়া রোদ-চাদরে
আশিরপদনখ আবৃত করে
আমি আলো হয়ে জ্বলি
অনুরোধের আসরে, বৈঠকি জলসায়।
জোনাকি সখীদের ভুলেছি স্বেচ্ছায়
সিন্দুকে জীর্ণবাস  অবসর কাটায়
কীটদংশনে
অযতনের ঘুঙুর দানাদুটি
পড়ে থাকে হৃদয়ের কাছে
কিশোরী যা বেঁধেছিল একদিন
মরমিয়া হাঁসটির পায়ে, ভালোবেসে।
সময়ে বহতা সব
নকশি আখর রেখে রোদ –জল-হাওয়ায়
সব ভেসে যায়।
ত্বক কুঞ্চনে আজ আগুন আভাস
এক মুঠো জল দাও, জীবন জুড়াক
ত্রাণমন্ত্রপাঠ দহন প্রলাপ
“স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ” পরিযায়ী প্রাণ।

বিষাদ-গুচ্ছ



                  
        (১)
পানপাতা মুখের পাশে
ছোট্ট তিল
সকল বিষাদ কথা
লেখা আছে সেখানেই।
(২)
তোমার বিষাদ – শ্বেত আঁচলে
কতবার মুছে নিয়েছি
মন খারাপের মুখ
আজ অবাধ্য হব
ফোটাব মরশুমী ফুল।
    (৩)
গরম ভাতে মেখে নিচ্ছ
একমুঠো বিষাদ
মরা জ্যোৎস্নায় ঝুলে আছে
ক্ষয়াটে ফালি চাঁদ,
আজ একাদশী রাত।
       (৪)
শুচি শয্যায় ছেয়ে থাকে
একাকীত্বের বিষাদ
রাত ঘন হলে
দুখিলি পান খেয়ো মেয়ে
প্রতিবিম্বে রক্তরাগ
একার সঙ্গে একার সোহাগ

প্রস্থান



যেতে বল যদি চলে যাবো
 শুধু একমুঠো মাটি, বসতবাটির
বেঁধে নেবো আঁচলের কোলে
দুএকখানি নুড়ি ও পাথর
জীবন যেখানে লেখে রঙিন আখর
অকিঞ্চিৎকর, নেবো সাথে৷
গৃহস্থ নদীটির পারে
 রেখে যাব অর্থহীন অর্জন সব ৷
কাঠামো পূজার পরে বিসর্জন স্তব  
যাবো এঁকে, পত্রপুষ্পভারে৷
জলপাখিদের স্বরে
 ভরে দিয়ে যাব সেই গান
একদিন যা শুনেছিল প্রাণ, পরিতোষে।
 তারপর, সাদামাটা হেঁটে যাওয়া  
দূর থেকে দূরে
এ প্রান্তের মাটি চিহ্নে
 বসত গড়ার খেলা, অন্যপ্রান্তরে৷