সীতেশবাবুর ভারি অশান্তি
। অশান্তির চোটে বদহজম, অম্বল,উদগার সব চলছে। কারণ? কারণ হল
‘গল্প”।এই কদিন ফেসবুকে যে
গল্প লেখার ধুম পড়েছে, তিনি তার সংগে পাল্লা দিতে পারছেন না। এমনিতে তিনি বেশ
খোশমেজাজি । ওসব গপ্পো-কবিতার চেয়ে রাজনীতি নিয়ে গলা ফাটাতে বেশি পছন্দ করেন। সবসময়
বিরোধীপক্ষ। কিন্তু ইদানীং কারো সঙ্গে রাজনীতির আলোচনা তেমন জমছে না। একটু মুখ
খুলতে গেলেই সবাই থামিয়ে দিচ্ছে’এখন বিপদকাল,রাজনীতি করোনা।’এদিকে
অফিস কাছারিও বন্ধ। ফেসবুকীয় বিচরণ ছাড়া কাল কাটানোর আর কি বা উপায়! আর এই ফেসবুকে
ঘোরাফেরা করতে গিয়েই যত বিপত্তি। আইব্বাস...সব্বাই কেমন সাহিত্যচর্চা
করছে,সংস্কৃতির সাধনা করছে। তিনিও কবিতা পাঠ, গান দিয়ে চেষ্টা চালালেন। তেমন লাগসই
হল না। লাইক,কমেন্ট আসি আসি করেও এলো না। সীতেশবাবুর অম্বল বাড়তে থাকলো। অতঃপর
ফেসবুক জরীপ করে সিদ্ধান্তে এলেন গপ্প লিখবেন।
সীতেশ
১-গপ্প লেখা অত সহজ নাকি! কত পড়াশোনা চাই
সীতেশ
২- আরে...অত কঠিনও না। সবাই লিখছে কি করে
সীতেশ
১-সবাই মোটেও লিখছে না...আর লিখলেও তা গল্প হচ্ছে কিন কে জানে!
সীতেশ
২-ছাড়ো তো! সবাই লিখছে।যারা এতদিন কাব্যি লিখত, তারাও লিখছে।।আর ঝুড়ি ঝুড়ি লাইক
কমেন্ট পাচ্ছে...কি করে পাচ্ছে?
সীতেশ১-
সে কবিরা তো সৃষ্টিশীল । তুমি কবে কি সৃষ্টি করলে যে আজ গল্প লিখে ফেলবে!
সীতেশ
২-তাহলে শোন।আমার আর সহ্য হচ্ছে না...আমার বউ ...যে সারাজীবন চচ্চরি,মাছের ঝোল,ডাল
ভাত করে কাটিয়ে দিল, সেও নাকি কার দ্বারা ট্যাগিত হয়ে গল্প লিখে ফেললো...সেটা নাকি
আবার ফেসবুকে আরেকজনের দ্বারা পঠিত হবে...ভাবতে পার? গতকাল ভাত ধরে গিয়েছিল। তখনই তো
বলল...গল্পটা শেষ করতে গিয়ে হয়ে গেছে...ইসস কি ডাঁট । আরে রান্নাবান্না করা
মেয়েছেলে গল্প নামিয়ে ফেলল আর আমি এত জ্ঞান গম্যি থাকা মানুষটা একটা গপ্প লিখতে
পারবো না!! হতেই পারে না।
সীতেশ১-বেশ
, চেষ্টা করতে দোষ নেই। কিন্তু বউকে মেয়েছেলে বলে আন্ডারএস্টিমেট করতে যেও না,কেস
খেয়ে যাবে...
এরপর
তিনি চেষ্টার শুরু করলেন। বেশ পরিকল্পনা করে এক গল্পকার সাহিত্যিক বন্ধুর পরামর্শ
চাইলেন ।
স্বাভাবিক
কুশল বিনিময় ইত্যাদির পরে যে কথোপকথন হল তা এরকম—
-আচ্ছা
, তুই তো বেশ লিখিস গল্প।একটু টিপস দিবি...কিভাবে শুরু করা যায়
-তুই
লিখবি!
-না
মানে ওই আর কি! সবাই লিখছে ।।আমারো মন চাইল
-
ও আচ্ছা...এই ব্যাপার। ঠিক আছে তুই অণুগল্প লেখ
-সেটা
কি?
-
মানে ছোট মাপের গল্প। দৈর্ঘ প্রস্থে কম। মেদ কম ছিপছিপে,স্মার্ট,বেশ একটা মোচড়
থাকবে গল্পের শেষে । আর হ্যাঁ...মোস্ট ইম্পরট্যান্ট...মাপে ছোট হলেও তার ভেতরে
থাকতে হবে অনন্ত সম্ভাবনা...উপন্যাসের বীজ। আচ্ছা।এখন রাখছি...আমাকে আবার লাইভ হতে
হবে একটু পরে...
কেটে
যাওয়ার পর অবাক চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকেন সীতেশবাবু। বলল কি? গল্প লিখতে না
এক্সারসাইজ করতে...মেদহীন, ছিপছিপে। মোচড়।আর শেষে ওটা কি বললো...লাইভ হবে। মানে কি! এতক্ষণ কি ডেথে
ছিল।দুটো বড় বড় বদহজমের ঢেঁকুর উঠলো তার।
যা হোক, সপ্তাহখানেকের চেষ্টায় লিখে ফেললেন একখানা ছোট
কলেবরের গল্প অথবা গপ্প। ফেসবুকে দেব দেব করেও দিলেন না। আরও সপ্তাহখানেক ঘষা মাজা চালালেন। প্রথম গল্প বলে কথা। লাইক কমেন্ট
না এলে পরিশ্রম বৃথা।
গল্পটাকে মনোমত করে তুলে ছাড়ার আগে আরেকবার ফেসবুকে নজর ঘোরান।।দেখা
যাক...এই দু সপ্তাহে আরো কত নতুন গল্পকার গল্প লিখলেন ...আরে, একি...সশব্দেই বলে
ওঠেন...শশব্দের গল্প...এ তো অণুগল্পের চেয়েও ছোট সাইজ!!এ আবার কেমনে লেখে...আগে
গোণে না আগে লেখে...কি মুস্কিল! নিজের গল্পের শব্দ সংখ্যা গুণতে থাকেন । সাড়ে
তিনশো প্রায়।
সাড়ে তিনশো থেকে
মাথা ঘামিয়ে, বদহজম বাড়িয়ে একশ শব্দে
পৌঁছাতে আর এক হপ্তা। এবার বদ্ধপরিকর...ফেসবুকে যাচ্ছেই। কানে এল তার আটপৌ্রে বউয়ের ফোনালাপ
-কি রে মিলি, আবার ট্যাগালি...এইবার পঞ্চাশ
শব্দের...আচ্ছা...নাম দেবে যারা ভাল লিখবে? খুব ভাল...কি? পরের সপ্তাহে কুড়ি
শব্দের? ভালই।।ভাবতেই সময় নেবে...লেখা তো ফটাফট হয়ে যাবে।।
ডাইনিং থেকে মেয়ের গলা...তোমরা কি বোর্ড এক্সাম দিচ্ছ
মা? আমদের প্রশ্নপত্রে তো এরকম বলে...ওয়ার্ডস লিমিট হাণ্ড্রেড,ফিফটি...
সীতেশবাবু আর শুনতে পান না...নিজের কাটাকুটি করা একমাত্র
গপ্পের দিকে ঘোর লাগা
চোখে তাকিয়ে থাকেন
পরের সপ্তাহে, তার টাইমলাইনে ভেসে ওঠে কয়েকটি শব্দ
“ইলাস্টিকের মধ্যে ক ”
দশ শব্দের জন্য ইলাস্টিক আস্তে টানুন, কুড়ি শব্দের জন্য
আরেকটু জোরে, পঞ্চাশ ও একশর জন্য জোর ক্রমান্বয়ে বাড়ান...আর উপন্যাসের
জন্যে...পটাং...
খবরে জানা গেছে, লাইক ও কমেন্ট কম পড়েনি।