Wednesday, November 9, 2016

বিসর্জনের পর


        
শূন্য মন্ডপের খাঁচায়
লুটিয়ে থাকে সন্যাসী রাত। 
 বিসর্জনের গন্ধ মেখে
হেমন্ত কুয়াশায় স্নান সেরেছিল
 যে কোজাগরী চাঁদ ,
কার্তিকের কাঙাল প্রদীপের সাথে
বহুদিনের ভাব-ভালবাসা তার।
এখন, উৎসবের মাঠে
নিশ্চুপ হাহাকার , 
আলোর ছায়ায় গড়ে ওঠে অজানা কাহিনী
খড়হীন কাঠামোয়।
 ছন্দসী ক্রীড়াময় ছুটে আসে যুবাশ্মরোহী
যুদ্ধের উপক্রমণিকায়-
তূণীরে সাজিয়ে  মহাতূণ
গোপন শরসন্ধানে।
যে যুদ্ধ অনিবার্য
বোধন ও বিসর্জনের গাথায়
নির্জন কবিতার মত সে যাপন
সুগভীর কথা বলে যায় ।
গড়ে ওঠে বিজয় তোরণ
অকথিত মোহন কারুকাজে
 শুরু হয় 
আগামী উৎসবের খোঁজ
উদ্বৃত্ত জীবনের আঁচে। 

Thursday, October 27, 2016

দেবদারু




               
স্বর্গের সিঁড়ি বড় পিছল,
আমি বরং দেবদারু হব
সহজ বিভঙ্গে
তীব্র আসঙ্গময় পত্রসাজের 
সরল আয়োজনে
সূচিত হবে  উৎসবের রাত
উল্লসিত দিন, সবুজ আনন্দের
গহন বিস্তারে ছায়া-কারুকাজ
ছড়াবে মায়াবী আলো
অরণ্যের গভীর আঁধারে।
উচ্চশাখা , আকাশে ছোঁয়াবে মাথা
সেরে নেবে আন্তরিক কথোপকথন
নিজস্ব ঈশ্বরের সাথে
মৃদুস্বরে , সুবাসিত আলাপনে।
একদিন পারিজাত বনে
কস্তুরি গন্ধে যখন তুমুল প্রলয়
সুমসৃন দেহকান্ড বেয়ে
বহে যাবে স্নেহরস, অপার  প্রণয়  
আশ্রিত তৃণপাত্রে ভরে দেবে
অনিঃশেষ  প্রেম, আশ্লেষে আবেগে
 শেষ বজ্রপাতের আকাঙ্ক্ষিত রাতে।   

Tuesday, October 25, 2016

মাতৃরূপেণ




"রূপংদেহি, জয়ং দেহি, যশোদেহি----"

চন্দ্রাতপের নিচে
বিছিয়ে রাখি আতপ্ত শরীর
বীজনে মধুক্ষরা শান্তির ছল
কাঙ্খিত স্তবে আকাঙ্খিত নির্মাণ শবপ্রতিমার৷
আমি প্রান্তরে হেঁটে যাওয়া কৃষকরমণী
সাধারণী
মনোযোগী শস্যনির্মাণে
ক্ষুধার্ত সন্তানের৷
অস্বীকার করেছি প্রতিদিনের সহমরণ
অবহেলায়
রূপ জয় যশ লোভী পৃথিবীর বিপরীতে
ভেসে যাই জল- মাটি ভেঙে
একাকী অসীমে
আঁচলের ছিদ্রপথে
খেলা করে সূর্য ও চাঁদ
ভুলে যাইবিষাদ, জন্মান্তরের৷

দর্পণে দেখেছি মুখ
চাকচিক্যহীন
বিষ্ণুচক্র থেমে গেছে দূরে
স্পর্ধিত দৃষ্টির আগে,
ঈপ্সিত নয় সতীমাহাত্ম্য
খন্ডিত দেহভাগের৷

আমার পূর্ণ পৃথিবী
প্রতি সন্ধ্যাকালে
জড়ো হয় সহজ দাওয়ায়
স্বেদসিক্ত ভালে
জেগে ওঠে ত্রিনয়ন গভীর মায়ায়

আমি নারী, সাধারণী
সন্তান পরশে শুধু দিব্যজননী৷








Sunday, May 1, 2016

বসুধা

মেয়ে কিছু বড় বোকা হয়
যারা কোনদিন ভালবাসেনি
কোনদিন তাকে ভাল রাখেনি
তাদের ভালবেসে বেসে শুধু একা হয়
একার আকাশে অভিমান মেঘ জমা হয়
বৃষ্টির জলে চোখ উপচানো নদী বয়
নদীর জলে একাই একটু ডুবে যায়
প্রতিদিন জল ছল করে আরো বেডে় যায
তীরে পৌঁছাবে ভাবে যেই ক্ষণে
ঠিক সেই ক্ষণে তরী তার পুরো ডুবে যায়----পুরোটাই
একা বোকা মেয়ে একা বেঁচেছিল
তবু একা বোধে মরে যায়----মরে যায়৷

Tuesday, April 12, 2016

কুয়াশাদুপুর




                            
সব কুয়াশা আখর এখন থাক
রোদ লেখো , রোদ
আকাশে মাটিতে জলকণায় ,
দু এক ফোঁটা
ধূসর পান্ডুলিপির প্রতি পাতায়।
সমস্ত মরশুমি ফুল
কারুময় বাগিচা ছেড়ে
উঠে আসুক সহজ দাওয়ায়
দাওয়া থেকে কপালে তোমার...আঁচলে
নিস্তব্ধ কুঠুরি যত খুলে দাও
সশব্দ প্রত্যাঘাতে ।
সব চোখ হয় নাতো
পাখির নীড়ের মত...সব চোখ
খড়কুটো বিচালির নিশ্চিত আশ্রয়
কিছু কিছু আসমানি নীল
ধরে রাখে আশান্ত নদী ঢেউ
উড়ে যাও ,অথবা ডুবুরি গহনে
ঝিনুক শব্দ খুঁজে খুঁজে
হেঁটে যাই বালুতটে
কুয়াশাদুপুরে
একা...বা বহুজনে।

রোজনামচা



যেমন খুশি এঁকে ফেলো এক ছবি
ভরে দিও তাতে ভোরের নরম রঙ
কথা সব যত বলতে পারনি আজও
এখনি তবে বলে ফেলো সত্বর

রোজনামচার ছোট ছোট ফাঁক জুড়ে
জমেছে অনেক বিপজ্জনক ধুলো
ভেজা হাতে তা আলতো মুছিয়ে নিয়ে
বিছিয়ে দিও আদর-কোমল তুলোট

মেঠোপথে আজ যেতেই পারি নেমে
খুঁ জে দাও যদি একটুকু অবসর
কথা দিতে হবে পাশে যাবে পায়ে পায়ে
বিকেল গড়ানো সন্ধ্যায় দেবে মন

আধফোটা কলি যে অস্ফুট গান গায়
সুরে তার গেঁথো মন-কেমনের মালা
খেলাঘর জুড়ে অমনোযোগী বাতাস
পথ শেষ ---তবু রয়ে যায় পথচলা