Wednesday, March 15, 2017

সুধী কালিকাপ্রসাদ





।। দেবলীনা সেনগুপ্ত।।
সুধী কালিকাপ্রসাদ,
          হ্যাঁ, আপনাকে আমি এভাবেই সম্বোধন করব। আমি এক অতি সাধারণ মানুষ , সাধারণ জন।  শুধু 'কালিকা" বা শুধু 'প্রসাদ" বলে ডাকার মত কোন নির্জন,নিবিড় সম্পর্ক আপনার সঙ্গে আমার ছিল না।আপনার কোথায় জন্ম, কোথায় বাস, আপনি কী করেন, কেমন ভাবে করেন, কী করতে চান-- সেসব নিগূঢ় তথ্য ও তত্ত্বেও খুব বেশি আগ্রহী ছিলাম না।আমার সাধারণ দিনাতিপাত গতানুগতিক প্রাত্যহিকীতে আবদ্ধ।  সেখানে মাস কাবারের হিসেব আছে, ছেলে মেয়ের পড়াশোনার ব্যস্ততা  আছে, স্বামীর মনপছন্দের রান্নার জোগাড়  আছে, কাজের লোকের সঙ্গে কাজিয়া আছে ,আর এতসব ব্যস্ততার মাঝেই আমি যতটুকু যা থাকার আছি। আলাদা করে নিজেকে কোথাও খুঁজে পাইনা, এতটাই সাধারণ আমি। এই সাধারণ দিনচর্যায়, অতি সাধারণ বুদ্ধি দিয়ে আপনার মত এক বিশাল উচ্চতার মানুষকে মাপার ভাবনাই উদয় হয় নি কখনো আমার মনে। শুধুমাত্র, কোন খরদিনে যখন বুকের ভেতরের মাটি ফুটিফাটা, তৃষ্ণায় শুকিয়ে উঠি আকণ্ঠ, যখন মনে হয়, এই যে এইসব আমার মান্য পরিচিতি , সে আসলে আমি নই, আমি একজন অন্য কেউ, কে আমি! কে আমি!--- তখন সেলফোনের ইয়ারপ্লাগেও মধ্য দিয়ে আপনার কথা গান সুর মরমে পৌঁছে যায় । বৃষ্টি নামায় বুকের ভেতর। আমি আকুল ভিজি। সোঁদা গন্ধে অস্তিত্ব ভরিয়ে নিয়ে আবার ব্যস্ত হয়ে যাই অস্তিত্বহীনতার খোলসটুকু পরে নিয়ে সংসারী সং সাজতে।
        আপনি আমার কে হন কালিকাপ্রসাদ? আপনি কি আমার কেউ ?
       আপনি আমার কেউ ছিলেন না তো কালিকাপ্রসাদ। এত সাধারণ একটি প্রাণের সঙ্গে আপনার অসাধারণ প্রাণশক্তির কোন আত্মীয়তা যে থাকতেই পারে না! তাহলে! তাহলে কেন সেই বসন্ত সকালে সেই নিদারুণ সংবাদে আমি আমূল কেঁপে উঠেছিলাম! কেন  অসুস্থ বোধ করেছিলাম! কেন বোধ করেছিলাম নিরাপত্তার অভাব... আশ্রয় হারানোর অনুভূতিতে বিপর্যস্ত হয়েছিল মন? তাহলে কি আপনি কি আমাকে এক "ঘরবাড়ি" দিয়েছিলেন চুপিচুপি। যেখানে আমি 'নিজের কয়জনা" কে নিয়ে বসত করতে পারি! যেখানে অন্তরের অন্তরতম 'মনের মানুষ ' টির সঙ্গে মিলনপিয়াসী আমি দিনরাত কাটাতে পারি নির্বিঘ্ন প্রতীক্ষায়! যেখানে ভ্রমর এসে  কানে কানে শুনিয়ে যাবে "সোনা বন্ধুর" আগমন কথা, আমি তার আশায় আকুল আনন্দে কাঁদবো ----কাঁদবো আর, শুদ্ধ হব---বিশুদ্ধ হব----!!
          আপনি আমার কে হন?
        আপনার অকালপ্রয়াণে আয়োজিত কোন শোকবাসরে প্রথাগত শোকপালনে  আমি ডাক পাবো না। আমি সাধারণ, তাই আপনাকে নিয়ে আমার শোক "বিশিষ্ট " হতে পারে না। কুলীন ভাষায় আপনার শোকপালনের মন্ত্র উচ্চারণ করতে পারব না আমি...আমি যে কিছুই জানি না ও পারি না। কিন্তু, বিশ্বাস করুন, আপনার জন্য আমার শোক নিভৃত ও নিবিড়। প্রতিদিন তা নিবিড়তর হয়ে চলেছে । ভবলীলায় যত সংসারী রঙই মাখি না কেন, দিনশেষে বৈরাগী রঙ টি নিয়ে বসবো আপনার পায়ের কাছেই।
আপনি আমার কেউ হন না। শুধুমাত্র বিধির বিধানে আপনার ও আমার জন্ম তারিখটি এক।
আপনি আমার অনেক কিছু হন...অনেক কিছু।

SHARE

Monday, March 13, 2017

রঙিন চশমা









যারা সত্য বলেছিল
তারা কোন পুরস্কার পায়নি
তালিকাভুক্ত হওয়ার মত
যথেষ্ট স্নেহপদার্থ
ছিল না তাদের জীবন যাপনে
চোখে ছিল না রঙিন চশমা
চাঁদকে তারা সূর্য বলেনি
অথবা অমানুষকে ঈশ্বর
তারা এক ঘরে একা হয়েছে
একা--একাতর----এবংএকাতম
তারা বিদ্রোহ করেনি
অধরোষ্ঠের সংগমে , প্রসারণে
ফুটিয়েছে উদাসীন উপেক্ষা
তারা বিপ্লব করেনি স্লোগানময়
দৃঢ়বদ্ধ চোয়ালে শুধু চলে গেছে
আলোকিত নক্ষত্রের পথে
একাই--- সত্য সাথে৷
একদিন বহুযুগ পরে
পৃথিবী আসর সাজায় তাহাদের তরে
বিজ্ঞাপনময়
পৃথিবীর বয়স বাড়ে
সত্য বিজ্ঞাপিত হয়৷

বোশেখ – ব্যথা



কৃষ্ণচূড়ার দৃপ্তশাখায়
জাগলো যখন বোশেখ – ব্যথা
তেপান্তরের মাঠের ছায়ায়
তুমিও একা আমিও একা ।
একটা নদী আমার নামে
পাঠিয়ে দিলাম তোমার দেশে
জোয়ার ভাটার হেলাফেলায়
উজান বেয়ে মাঝির বেশে
আসতে পার, মন যদি চায়
শীতের শেষে পত্রঝরায়
মাঠের পাশে কাশ আঁকবো
ধুলোর কাঁকড় সরিয়ে দিয়ে ।
কাপাস তুলোর নরম আদর
চাঁদের আলোয় ডুবিয়ে নিয়ে
জ্যোৎস্না ক্ষতে প্রলেপ দেবো
মেঘের ঘরে হাত বাড়িয়ে।
মাটির জীবন  মিশবে ধুলোয়
জন্মবীজও  মাটির নীচে
কৃষ্ণচূড়ার ছন্দ শিখে
লাল ছড়াব আকাশ দ্বীপে
সন্ধ্যা যখন, পাখির সাথে
ফিরবো বাড়ি গহন বনে
একলা আমি গান শোনাব
একলা তোমায় আপনমনে

কফিন



  যারা কোনদিন আসবে বলেনি
  তাদের জন্যেই,  মায়া আঁচল পেতে রাখে
  ভোরের পৃথিবী।
 কুয়াশা ভেজা পথে,
 মৌন  কফিনের নামফলক ভেঙে
 উধাও দু-এক শিশিরআখর
 তির্যক সূর্যালোকে ।

 যারা একদিন ছিল,
 ছিল প্রবলভাবে
 আগুনে ও উত্তাপে
 জল-মাটি-বাতাসের সংযোগে,সদ্ভাবে
 তারা চলে গেছে
 চলে গেছে  বহুদূরে
 মলিন স্বাক্ষর রেখে
 শ্যামল  বৃক্ষমূলে
  জমা রেখে যাবতীয় দীর্ঘশ্বাস
পাতার  আড়ালে থাকা গভীর কোটরে

এইসব মমিদেহ ঘিরে
এখন প্রেতনাচন সময়ের
প্রবল উল্কাপাতের শোকে
ধারালো , আরো ধারালো হয় ইস্পাত
শীতল থেকে শীতলতম মৃত্যু ঘনায়
পাহাড় ও উপত্যকায়
অব্যর্থ ভবিতব্য হয়ে

মানুষের পালে
শুধু ভিড় বাড়ে
জান্তব গন্ধ ছড়িয়ে।