Thursday, November 26, 2015

সঞ্জীবন

এবং তারপর-
দিগন্তবিস্তারী প্রান্তরময়
যখন ইতঃস্তত ছড়িয়েছিল
অনাকাঙ্ক্ষিত শবেরা
যাদের মৃত্যুর কোন
পূর্বাভাস ছিল না,
ছিল না কোন অভিপ্রায় ,
অনভিপ্রেত অন্তিম প্রেতগানে
যখন সূর্যও দ্বিধান্বিত ছিল আত্মপ্রকাশে
তীব্র কটু গন্ধ বাতাস
শ্বাস রোধী বিষে
অনিশ্চিত করতে চেয়েছিল সকল সঙ্কল্প
তখন কবি এসে দাঁড়ালেন ধীরপায়ে
সে বধ্যভূমির দ্বারে
তার গুলিবিদ্ধ হৃৎপিণ্ড থেকে
অঝোরে ঝরে পড়লো রৌদ্র রঙ আশ্চর্য আলো
প্লাবিত করলো চরাচর
বাঁশিতে বেজে উঠলো সঞ্জীবনী সুর
সমস্ত মৃত মানবচিহ্ন
জারিত হল পুনর্জীবনের মন্ত্রে
নিথর শবদেহরা উঠে দাঁড়ালো
একে অন্যের হাত ধরে
বৃন্দগানে শোনা গেল অমোঘ উচ্চারণ
কোন যোদ্ধা বা যুদ্ধাস্ত্র নয়
শেষ কথা বলে যাবে
কলম, বাঁশি আর নূপুরনিক্বণ

Friday, October 9, 2015

স্মৃতিকথা




সেদিন রাতে,
নক্ষত্রেরা অনেক অনেক আলো
ঝরিয়ে ক্লান্ত হয়েছিল।
বয়স্ক চাঁদ
আরও কত পরিক্রমা
বাকি আছে ভেবে
নিতান্ত উদাস আলসে  
আনমনা ভেসেছিল  
 মাঝ – আকাশে একাই।
আমার অতন্দ্র তানপুরায়
তোমার স্পর্শ সুখ
বিস্মৃতির প্রলেপ মাখা
ফেলে আসা যুগ
ও যুগান্তরের কথা
ছড়িয়েছিল আভাসে ।
ইঙ্গিতে বলেছিল ,
 কিছু কিছু ভালোবাসা
বেঁচে থাকে একাই
একান্ত যাপনে,
মরে  যায়, প্রিয়সমাগমে...  
         

জন্মদাগ




বিষণ্ণ প্রয়াসের মত
সন্ধ্যা নামে,
 মেশে অন্তরযামে ।
প্রান্তর রেখায় পাণ্ডুর রঙ,
দিনলিপির কথকতা
মগ্ন অন্বেষণে
শিকড়ের চিহ্ন দাগ।
জন্মতিলকের মতই
অনিবার্য সে ছাপ
অস্তিত্বের আবহ –আখ্যানে।
যেখানে প্রোথিত করি মূল
বারি- বায়ু সিঞ্চনে
আভাসে ফুটে ওঠে ফুল
সে উদাসীন মাটির
 দায় কে নেবে
কোন মহাপাপ
অথবা   পুণ্য সুচতুর
 কোন অন্তিম শ্লোক –গান?

 আমি তো একাই বসেছি সখা

জন্মদিনে



একটা জন্ম
সম্পর্কের লতাপাতায়
শেকড়ে মূলে জড়িয়ে
 ক্রমশঃ এক জীবন হয়ে ওঠে
সমস্ত সুখ ও শোক
সকল প্রমোদ ও প্রমাদ
বৃন্তমুখে ফুল হয়ে
গান গায়, ভালবাসে
ভালবাসতেও শেখায়
প্রতি জন্মদিনে তাই
এক আমির মধ্যে
জন্ম নেয় কত আমি
দৃঢ় গ্রন্থির টানে
সমৃদ্ধ হৃদি-ডোর
টানাপোড়েনের গল্পের মাঝেই
খুঁজে নেয় আগামীর কল্পকথা
কিছু বিশ্বাসে, কিছু প্রত্যাশায়
জন্মের পাশে জীবন
জীবনের সঙ্গেই জন্ম
অশেষ... অনন্ত

নিভৃতের ঈশ্বরী



জ্যোৎস্না রাতে
সবাই যখন গিয়েছিল বনে,
আমি যাইনি।
আমি তখন বনজ্যোৎস্না মেখে
আদিম ঈশ্বরীর মত
চাঁদের ঝরে পড়া আলোয়
নিভৃতের স্নান সেরেছিলাম।
কোমল বল্কলের নিবিড় গল্পে
তৃণলতার বুননকাজ
নির্দিষ্ট করেছিল আমার রূপসাজ।
অনাদি প্রকৃতির নিবিড় রহস্যের ঢেউ
কতবার...কতবার খেলা করেছিল
আমার খোলা চুলে
আর তারপর
প্রথম সূর্যাগ্নির দিকে চোখ মেলে
আমার প্রত্যয়ী ঠোঁট
উচ্চারণ করেছিল সেই তীব্র শব্দ স্রোত
যার অভিঘাতে
সমস্ত নির্দেশিত পথ
চিনে নিয়েছিল নতুন গন্তব্য
উন্মুখ গতিতে
বাতাসও কেঁপেছিল অশ্রুতপূর্ব ঘোষণায়-
সমস্ত উৎসব আজ সেখানেই
ঈশ্বরীর সাজে যেখানে গান গায়
এক নির্বিকার মানবীহৃদয়।

Tuesday, September 8, 2015

পুনর্জন্ম



সব শব্দ শেষ হয়ে যাওয়ার পর
ছড়িয়ে থাকে যে মুখর নৈঃশব্দ্য
তাকে ছুঁয়েই জেগে উঠি প্রতিবার
নবনির্মাণে।
এখনো আকাশ নীল রঙ মাখে প্রতিদিন
স্থির ভরসায়,
পাহাড়েরা মুখ দেখে নেয় নদীজলে,
শস্যের আলাপনে
নিভৃতের গণগানে
যাবতীয় মৃতদাগ শবঘ্রাণ মুছে ফেলে
 নিশ্চিত প্রতিজ্ঞায় ।
ইতিহাসের শেষের পাতায়
মৃত্যুরা বারবার হার মানে
জীবনের আশ্লেষগাথায়...